যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সারাদেশে এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এলপিজি অপারেটস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব)-এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যখন পড়তির দিকে, সেই অনুসারে বিইআরসিও দাম কমিয়ে ৮৪২ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে। সে অনুযায়ী কয়েকদিন কম দামেই কেনা-বেচা হয়েছে। কিন্তু সোমবার-মঙ্গলবার সারাদেশে একযোগে পাইকারি দরেই ৮৯০ থেকে ১০০০ টাকায় বেচাকেনার খবর পাওয়া গেছে।
রংপুরের খুচরা বিক্রেতা সুমন মিয়া বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে ৮৪০-৮৭০ টাকা দিয়ে সিলিন্ডার কিনেছি। মঙ্গলবার (৮ জুন) কিনতে গেছি দাম নিয়েছে ৮৯০ থেকে ৯২০ টাকা পর্যন্ত। বরগুনাতেও খোঁজ নিয়ে বাড়ন্ত দরের কথা জানা গেছে। কারণ অনুসন্ধানে যা পাওয়া গেছে তা খুবই ভয়ঙ্কর বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। লোয়াব দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, তার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতেই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে।
লোয়াবের দাবি উপেক্ষা করে গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন গণশুনানিতে লোয়াব প্রস্তাব করেছিল ১২৫৯ টাকা। লোয়াবের সেই প্রস্তাব নাকচ করে বিইআরসি দাম ঘোষণা করেছিল ১২ কেজির সিলিন্ডার ৯৭৫ টাকা। লোয়াবের যুক্তি খন্ডন করতে গিয়ে বিইআরসি তখন বলেছিল, আপনারা যে দাম চাচ্ছেন, তার চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করছেন। আমরা মার্কেট যাচাই করে দেখেছি, ৯৫০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে আপনাদের প্রস্তাবের কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না।
ওই দর ঘোষণার পরদিনেই লোয়াব আবার দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে চিঠি দেয় বিইআরসিকে। কিন্তু বিইআরসি সেই চিঠির জবাব দিয়ে বলেছে, গণশুনানি ছাড়া এলপিজির প্রফিট মার্জিন বাড়ানোর কোন পথ খোলা নেই। বর্তমানে শুধু আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম উঠা-নামা করলে সেই পরিমাণ কম-বেশি হবে। গণশুনানির আদেশের প্রেক্ষিতে বিশেষ কমিটি এটি সমন্বয় করছে। ১২ এপ্রিল ঘোষিত দরের বিষয়ে আপত্তি থাকলে লাইসেন্সিকে আবেদন করতে হবে। এ নিয়ে রশি টানাটানির মধ্যে আরও দুই মাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। সর্বশেষ ৩১ মে জুন মাসের জন্য দর ঘোষণা করা হয়। সেখানে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, গত ৩০ মে ৬টি কোম্পানি দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানির আবেদন করেছে। আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেবো।
বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, তারা প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করছেন, জুলাই মাসে গণশুনানি নেওয়া হতে পারে। তার ক্ষেত্র তৈরি করতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে বলে খোদ বিইআরসিও মনে করছে।
লোয়াবের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিইআরসি দর ঘোষণার সময়ে তাদের অনেকগুলো খাতের খরচকে বিবেচনা আনা হয়নি। অপারেটর প্রফিট, ব্যাংকের সুদ, আমদানি ব্যয়, ডিস্ট্রিবিউশন খরচ, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার কমিশন সবমিলিয়ে ৪৮১ টাকা চেয়েছিলাম, সেখানে বিইআরসি ১৯৪ টাকা অনুমোদন করেছে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার প্রফিট যথাক্রমে ২৪ টাকা ২৭ টাকা ধরা হয়েছে এটি বাস্তবসম্মত হয়নি। এলপিজি শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় ১২ কেজি সিলিন্ডারের ঘোষিত দরের সঙ্গে আরও ২৮৭ টাকা যুক্ত করা হোক।
গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন বলা হয়েছিল সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে প্রতি মাসের ভিত্তি মূল্য অর্থাৎ গ্যাসের নীট মূল্য ধরা হয়েছে। সিপির দর উঠা-নামা করলে প্রতিমাসে দর সমন্বয় করা হবে। মার্চের সিপি (সৌদি আরামকো কন্ট্রাক্ট প্রাইস) দর ছিল যথাক্রমে প্রতি টন প্রোপেন বিউটেন ৬২৫ ও ৫৯৫ ডলার। পরের মাস এপ্রিলে হয় যথাক্রমে ৫৬০ ও ৫৩০ ইউএস ডলার। মে মাসে ৪৯৫ ও ৪৭৫ ডলারে নেমে আসে সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৮৪২ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।