গ্যাস বিতরণের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)-কে ভেঙে আলাদা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান।
শনিবার (৫ জুন) এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এমন তথ্য জানান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
আনিছুর রহমান বলেন, বৃহত্তর ঢাকা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকাজুড়ে তিতাস গ্যাসের কার্যক্রম বিস্তৃত। একদিকে মুন্সিগঞ্জ থেকে শেরপুর, আরেকদিকে ভৈরব থেকে কেরানীগঞ্জ। এতো বিশাল এলাকা কোনোভাবেই বর্তমান কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এ কারণেই আমরা তিতাস গ্যাসকে বিভক্ত করতে চাই।
সভায় কিভাবে তিতাসকে বিভক্ত করা যায়, তা জানতে খাত বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ চান জ্বালানি সচিব। এসময় উপস্থিত পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক খোন্দকার সালেক সুফি জ্বালানি সচিবকে জানান, ২০০২ সালে পেট্রোবাংলার এক প্রতিবেদনে তিতাস গ্যাসকে ঢাকা মেট্রো, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী, ময়মনসিংহ তিনটি ভাগে বিভক্ত করার একটি সুপারিশ তারা করেছিলেন। জ্বালানি মন্ত্রণালয় চাইলে সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি।
জবাবে জ্বালনি সচিব বলেন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগও অন্তত তিনভাগে তিতাস গ্যাসকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান জ্বালানি সচিব।তিতাস গ্যাসের আওতায় থাকা এলাকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। আর ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে গ্যাস পাইপলাইনের ওপর সবচেয়ে বেশি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বন্ধে অভিযান চলছে। যেহেতু বৈধ-অবৈধ সংযোগ মিলে গেছে, আমরা এখন উৎসে লাইন কেটে দিচ্ছি। এতে বৈধ গ্রাহকের কিছু অসুবিধা হচ্ছে। তবে তারা আমাদের সহায়তা করছেন। এক্ষেত্রে গ্যাস কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তাদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। শুধু বদলি না, বিভাগীয় ব্যবস্থা, প্রয়োজনে ফৌজদারী মামলা পর্যন্ত করা হচ্ছে। এসব কাজ কঠিন, তবুও আমরা করছি। যেকোনো উপায়ে আমরা গ্যাসের অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করবো। আর কেরানীগঞ্জে গ্যাসের লাইনের ওপর স্থাপনা অপসারণেও আমরা ব্যবস্থা নিবো। যেহেতু এটা জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা। এক্ষেত্রে আমরা তার সহায়তা নিবো।
এই মুহূর্তে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমি নিজে কয়েকবার আবাসিকে গ্যাস সংযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছিলাম, তিনি না করে দিয়েছেন। এমনকি সচিবদের আবাসনে গ্যাস সংযোগও নাকচ করে দিয়ে এলপিজি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান আনিছুর রহমান।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন টিজিটিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহ। তিনি বলেন, তিতাস গ্যাসে কি পরিমাণ অবৈধ লাইন রয়েছে তা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এ বিষয়টি এখন তিতাস গ্যাস এবং জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কোনো প্রকার হিসাব ছাড়াই অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান চালাতে হচ্ছে আমাদের। অনেক এলাকায় বৈধ লাইনের পর ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবৈধ লাইন চলে গেছে। এসব এলাকায় কিছু বৈধ গ্রাহক থাকলেও তাদের অনেকে লাইন চালুর পর একবারও বিল জমা দেননি। গজারিয়া এলাকায় প্রতিদিন ১৫ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়, যার মধ্যে সাড়ে ১৩ লাখ ঘনফুট গ্যাসের বিল আমরা পাইনা। কেবল নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে ছয় থেকে সাত কোটি ঘনফুট গ্যাসের বিল আমরা পাচ্ছিনা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশিন (বিইআরসি)-এর সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-এলাহি চৌধুরী বলেন, বাসাবাড়িতে ৭৮ ঘফুট গ্যাস সরবরাহের বিপরীতে ৯৭৫ টাকা বিল সংগ্রহ করে তিতাস। বাস্তবতা হচ্ছে আদায় করা বিলের বিপরীতে ৪০ থেকে ৪৫ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। অর্থ্যাৎ বাকি গ্যাসটা হিসাবের আওতায় থাকে না, যা হচ্ছে অবৈধ গ্যাস। আর যতদিন এই অবৈধ গ্যাস থাকবে, ততদিন অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা যাবে না। এ সমস্যা সমাধানে গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত প্রিপেইড মিটার আর ইভিসি মিটার চালু করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শঙ্কর মজুমদার, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান পাটওয়ারী, জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্, সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. নাসির উদ্দিন, বিইআরসির সাবেক সদস্য আবদুল আজিজ খান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান।