ফয়েজ আহমেদ তুষার:
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। এ লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবনা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে আরপিসিএল।
প্রস্তাব অনুযায়ী, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীনস্থ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল গজারিয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য ১৮০ একর জমির প্রয়োজন হবে। গজারিয়ায় অধিগ্রহণ করা ২৫২ দশমিক ৫৬ একর ভূমির উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাস/এলএনজিভিত্তিক ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফেজ-১) নির্মাণের প্রাথমিক কাজ চলছে।
আরপিসিএলের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. সেলিম ভূঁইয়া গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, গজারিয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের অন্তত ২০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। ইতোমধ্যে জামালপুরে ১০০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া, পঞ্চগড়ে একটি ৪০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকৌশলী সেলিম ভূঁইয়া আরও বলেন, সৌরবিদ্যুতের পাশাপাশি এখানে গ্যাস/এলএনজিভিত্তিক ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজও চলমান। এটিও ‘এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে আড়াইশ’ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। তবে স্থানীয়দের বাধার মুখে প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
তুলনামূলক সাশ্রয়ী হবে ধারণা করে সরকার সারাদেশে এক ডজনের বেশি কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে নানা জটিলতায় বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি হওয়া এর মধ্যে অন্যতম কারণ। কয়লার পরিবর্তে আমদানিকৃত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস)ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিদ্যুৎ বিভাগের আগ্রহ এর আরেকটি কারণ।
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র বলছে, যেসব স্থানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ অনেকটা এগিয়ে যাওয়ায় সেগুলো চলমান রাখা হয়েছে। কয়েকটি কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায়, সেগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি সাপেক্ষে ২০২৫ বা তারও পরে সেসব প্রকল্পে কাজ আবার শুরু হতে পারে আবার কয়েকটি প্রকল্প কয়লার পরিবর্তে গ্যাস বা এলএনজিভিত্তিক করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনী দাপ্তরিক কাজ চলছে।
আরপিসিএলের একটি সূত্র বলছে, গজারিয়ায় ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজ শুরু করতে আরে দুই-তিন বছর লাগতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এখানে ‘সোলার প্রজেক্ট’ স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে চাইছেন কোম্পানির নীতি-নির্ধারকরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনী ও দৌলতপুর মৌজায় অধিগ্রহণ করা ২৫২ দশমিক ৫৬ একর ভূমির উন্নয়ন, ভূমি সুরক্ষা, নদী তীরে ব্লক বসানোসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে বিদ্যুৎ পেতে প্রকল্প এলাকায় একটি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র (সাবস্টেশন) নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিরাট অংকের চাঁদা দাবি করে স্থানীয় একটি মহল সাবস্টেশন নির্মাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনার্জি প্যাকের কাজ বন্ধ করে দেয়। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্টের’ মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করে আবার কাজ শুরু করে এনার্জি প্যাক। এদিকে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে ৩৩/১১/০.৪০০ কেভি বিতরণ লাইন নির্মাণকাজ চলছে। এই লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ এনে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করা হবে। বিদ্যুৎ আনতে দৌলতপুর থেকে পূর্ব দিকে দক্ষিণচর মৌজা হয়ে পশ্চিম দিকে সারি সারি বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হচ্ছে জমির আইল ধরে।
আরপিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ৬০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এছাড়া, ৬০০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাস/এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফেজ-১) বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় তিন হাজার ৫শ’ কোটি টাকা।
ভবিষ্যতে গজারিয়ার একটি বিদ্যুৎ হাব নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আরপিসিএল। এখানে পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হবে; যেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।