Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

তিতাস ৭ দিনে ৭০ হাজার অবৈধ সংযোগ কেটেছে

লুৎফর রহমান কাকন:

সারাদেশে যেভাবে বা যে প্রক্রিয়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়েছে তাতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অগ্নিকা-ের আশঙ্কা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের তল্লার অগ্নিকা-ের মতো আরও ঘটনা ঘটতে পারে। পাইপলাইনে গ্যাসের প্রেসার বা চাপ বাড়লেই এ ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটবে। হবে প্রাণহানিও। ফলে সার্বিক বিবেচনায় নিরাপত্তার কারণে অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জ¦ালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা এবং গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে। ইতোমধ্যে সংযোগ উচ্ছেদের অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। প্রায় ৭০ হাজার অবৈধ গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সব সংযোগের মধ্যে শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক লাইনও রয়েছে।

তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে গত শনিবার পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ, কাঞ্চন এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ হাজার আবাসিক গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি। তিতাস গ্যাস তাদের নেটওয়ার্ক দেখে অবৈধ সংযোগের মূল পয়েন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সোনারগাঁও উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বিআর স্পিনিং মিলের পাশ থেকে ৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১৪০ পিএসজিআই ভাল্ব আউটলেট থেকে অবৈধভাবে নেওয়া ১০ কিলোমিটার লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ওই এলাকায় সাত হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০০টি ছোট শিল্প, ৫টি রেস্টুরেন্টও রয়েছে। রূপগঞ্জ এলাকায় ২২ মে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া এলাকার ৮ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সেখানে প্রায় তিন হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ২০ মে রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় ৫০ পিএসআইজি চাপের ৬ ইঞ্চি ব্যাসের এক হাজার বৈধ গ্যাস গ্রাহক এবং ৪০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দুটি শিল্প সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া ৫০টি অবৈধ বাণিজ্যিক সংযোগ দুটি উপজেলায় নেওয়া ১৬টি গ্রামে ৫০ কিলোমিটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ১৪০ পিএসআইজির ৮ ইঞ্চি ব্যাসের একটি গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ পাইপলাইন থেকে ১৫ হাজার অবৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগ ছিল।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন,

অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের কারণে বৈধ ব্যবহারকারীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া খুবই ব্যয়বহুল আমদানি করা লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) এসব অবৈধ ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করছে।

এদিকে বছরের পর বছর ধরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। তবে সেটা তেমন কার্যকর হয়নি। একদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে অন্যদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে এবার অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে তিতাস। যেসব এলাকায় গ্যাস সংযোগের অধিকাংশ অবৈধ হিসাবে চিহ্নিত হবে সেসব এলাকার পুরো গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, দেশে গ্যাস সংকট রয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করছে। আমদানি করা গ্যাসে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। অথচ সেই গ্যাসের বিরাট অংশ অবৈধ ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, অবৈধভাবে নিম্নমানের পাইপ, নানা উপকরণ দিয়ে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়েছে। নেটওয়ার্ক লাইনে গ্যাসের চাপ বাড়লেই বিভিন্ন জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটতে থাকবে। ফলে রাষ্ট্রের অর্থ সাশ্রয়, বৈধ শিল্প গ্রাহকদের সন্তোষজন সরবরাহ এবং সর্বোপরি অগ্নিকা- বা দুর্ঘটনা থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কোনো বিকল্প নেই।

যেসব এলাকার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে সেখানে প্রায় ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার হতো। তিতাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, যদি এলএনজি আমদানির বিষয়টি ধরে হিসাব করা হয় তবে দেখা যায় বিচ্ছিন্ন করা অবৈধ সংযোগগুলোই প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার গ্যাস ব্যবহার হতো। সে হিসাবে মাসিক ৬০০ কোটি টাকার গ্যাস ব্যবহার হয়।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে প্রায় অর্ধশতাধিক অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে তিতাস গ্যাসের লিকেজ, আগুন এবং বিস্ফোরণ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা নারায়ণগঞ্জের তল্লা। একই এলাকায় এক বছরের মধ্যে দুটি দুর্ঘটনায় সেখানে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ মারা যায়।

জ¦ালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণকারীদের আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যতদ্রুত সম্ভব অবৈধ গ্যাস সংযোগ শূন্যের কোঠায় আনতে। তিনি বলেন, এলাকা ধরে ধরে যেসব এলাকায় অবৈধ সংযোগ বেশি সেসব এলাকার মূল পয়েন্ট থেকে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। যদি কোনো বৈধ সংযোগ থাকেও পরে পরীক্ষা করে সংযোগ দিয়ে দেওয়া হবে।

 

Related Posts

শ্রাদ্ধ ৩ হাজার কোটি টাকা

FERB

‘অসত্য’ তথ্য পেট্রোবাংলার

FERB

মূল্যবৃদ্ধির ‘দায়সারা’ প্রস্তাব আমলে নেয়নি বিইআরসি

FERB