Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

এখনো অলস পড়ে আছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট

শাহীন চৌধুরী:  বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ঋণের টাকায় নির্মাণ করা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট অলস পড়ে আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে। সবগুলো সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হলে জাতীয় গ্রিডে পুরো বিদ্যুৎ যোগ করা যাবে না।এ কারণে লোকসানের মুখে পরতে পারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ করছে। এরমধ্যে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গোপালগঞ্জ গ্রিড পর্যন্ত ১৬৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। তবে কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও পদ্মার ক্রসিংয়ের সাড়ে ছয় কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি। যে কারণে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার আমিনবাজার পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজও পিছিয়ে রয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অংশের কাজ ডিসেম্বরে শেষ হবে। গোপালগঞ্জ হয়ে মোংলা পর্যন্ত একটি লাইন নির্মাণও জুনের দিকে শেষ হওয়ার কথা। এই সঞ্চালন নির্মাণ শেষ না হওয়ার কারণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে সক্ষম হলেও তাতে কোন কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে এনডব্লিউপিজিসিএল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, এই প্রকল্পের পদ্মা রিভার ক্রসিংয়ের সাড়ে ছয় কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হলে কোনোভাবেই ঢাকাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। এ লাইন নির্মাণে নদী সমীক্ষা চলছে জানিয়ে আরও বলেন, একাজ শেষ করতে অনেক সময় লাগবে। পদ্মাসেতুর সঙ্গেই নির্মাণ হবে এই সঞ্চালন লাইন।

জানা যায়, এই সঞ্চালন নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে নির্মাণ হওয়া এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়েছে। দ্রুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ করতে না পারলে এবং দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অলস পড়ে থাকলে দুদেশের যৌথ বিনিয়োগে গড়ে তোলা কোম্পানিটি ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবে। যে কারণে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম আরও বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যাটা দেখা দিয়েছে পদ্মা রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইনে। এটা পদ্মাসেতুর কাজের পাশাপাশি হয়তবা শেষ হবে। এতদিন এখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করতে পারলে লোকসানের আশঙ্কা তো থেকেই যায়।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তির হয়। ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রথম ব্যবহার করা হয়। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি-সজ্জিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ন্যূনতম জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।
২০১৬ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী এলাকায় ৯৮২ দশমিক ৭৭ একর জমির ওপর পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি- এনডব্লিউপিজিসিএল এবং চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) যৌথ অংশীদারিত্বে নির্মাণ করছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

সূত্র জানায়, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে গত বছরের ১৫ মে প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে। ৮ ডিসেম্বর উৎপাদনে আসে দ্বিতীয় ইউনিট। প্রতি ইউনিটে ৬৬০ মেগাওয়াট করে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পুরোপুরি সক্ষম। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় দুই ইউনিট একসঙ্গে চালু করতে পারছে না। কেবল বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও এর আশপাশে যতটুকু প্রয়োজন হয় ততটুকুই উৎপাদন করে সরবরাহ করছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ফেজে আরও ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে যার কাজ এখনো শুরু হয়নি।

Related Posts

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কতদূর

FERB

স্বাধীনতার ৫০ বছর, শুন্য থেকে মহাশুন্যে

FERB

একঘণ্টার লোডশেডিং মানতে পারছে না বিতরণ কোম্পানিগুলো

FERB