Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

বাপেক্সের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে আজারবাইজানের কোম্পানির মামলা

কূপ খননের বকেয়া পরিশোধ নিয়ে বিরোধ, যৌক্তিক কারণ ছাড়াই দেশ ছেড়েছে সকার :বাপেক্স

    মাহবুব রনি : তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে নিয়োজিত দেশের একমাত্র সরকারি কোম্পানি বাপেক্সের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে মামলা করেছে আজারবাইজানের রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানি সকার। গ্যাসক্ষেত্রের কূপ খনন বাবদ বকেয়া ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক-বিরোধের মীমাংসা না হওয়ায় তা আদালত পর্যন্ত গড়াল।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক আদালত সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারে (সিয়াক) বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) বিরুদ্ধে মামলা করে সকার। দেশে ব্যবসা পরিচালনারত অন্যান্য আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম খরচে গ্যাসকূপ খননের দর দিয়ে আশার বেলুন ফুলিয়েছিল ককেশাস অঞ্চলের দেশ আজারবাইজানের কোম্পানিটি। কিন্তু পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের নির্দেশনা ও অনুরোধ উপেক্ষা করে তাদের বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়া এবং বিল পরিশোধ নিয়ে বিরোধের কারণে পরিস্থিতি এখন বেশ তেঁতো। এবার তা মামলা-সালিশিতে গড়ালে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাপেক্সের কয়েক জন কর্মকর্তা।

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, সকারকে তাদের কাজের জন্য বিল দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যুক্তিহীনভাবে তারা কাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে গেছে। তাদের তিনটি কূপ খননের কাজ দেওয়া হয়েছিল। একটির খনন শেষ করে তারা চলে যায়। পুরো কাজ সম্পন্ন করতে তাদের অনেকভাবে অনেকবার বলেছি। একটি খুঁত ধরে তারা আদালতে মামলা করেছে। অথচ তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই।

তিনি বলেন, সিয়াক দুই পক্ষকে নিয়ে শিগিগরই বসবে। এরপর শুনানি হবে। শুনানির অন্তত ২১ দিন আগে তা নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেবে। আমরা মামলা লড়তে প্রস্তুত আছি। আইনজীবীরা এ নিয়ে কাজ করছেন। দেশের স্থলভাগে তিনটি গ্যাসকূপ খননে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বাপেক্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী দেশ আজারবাইজানের কোম্পানি সকার একিউএস ইন্টারন্যাশনাল ডিএমসিসি। কূপগুলো হলো খাগড়াছড়ির সেমুতাং দক্ষিণ-১, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ-৪ এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জ-১। এগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে খাগড়াছড়ির সেমুতাং-১ কূপটি খনন করে সকার। কিন্তু তাতে কোনো গ্যাস পাওয়া যায়নি।

পেট্রোবাংলার এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ঐ তিন কূপ খননের জন্য সকারকে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ২৭৯ কোটি টাকা) পরিশোধ করার কথা ছিল বাপেক্সের। সেমুতাং দক্ষিণ-১ গ্যাসকূপ খনন বাবদ ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার পরিশোধ করে বাপেক্স। ঐ কর্মকর্তা আরো জানান, অন্য দুটি কূপ খননের আগে প্রস্তুতিমূলক কাজের দরদাম এবং খননস্থান নির্ধারণ নিয়ে সকারের সঙ্গে জটিলতা তৈরি হয়। বেগমগঞ্জ-৪ কূপ খননের আগে প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য চুক্তির বাইরে গিয়ে ৬০ লাখ ডলার অগ্রিম পরিশোধের দাবি করে সকার। এই আগাম অর্থ দিতে রাজি হয়নি বাপেক্স। এদিকে সেমুতাংয়ে কূপ খনন বাবদ বিল পরিশোধে বাপেক্স দেরি করেছে—এমন দাবি করে ২০১৯ সালের জুনে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বাপেক্সকে জানায় সকার। বিদেশি কোম্পানিটি দাবি করে, কাজ শেষ হওয়ার ২৮ কর্মদিবসের মধ্যে বিল পরিশোধ করেনি বাপেক্স।

বাপেক্সের এক কর্মকর্তা জানান, সকারের দুর্বলতা রয়েছে। তারা নির্ধারিত সময়সীমার দ্বিগুণ সময় নিয়ে একটি কূপ খনন করে। সে অবস্থায় বিল পরিশোধে কিছুটা দেরি পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত। কিন্তু তারা সে পথে যায়নি। চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানোর পরও কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিল বাপেক্স। কিন্তু তারা তা শোনেনি। সকারের দেনা-পাওনা পরিশোধ করার অনুরোধ জানায় আজারবাইজান সরকারও। সালিশেই এখন বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। তিনি আরো জানান, সকারের অসম্পন্ন কাজ এখন বাপেক্স নিজেই সম্পন্ন করবে। অর্থাত্ বেগমগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ কূপ নিজেরা খনন করবে।

এদিকে কাজ অসম্পন্ন রেখে সকারের দেশত্যাগে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশে কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্তত ছয়টি কোম্পানির পাওনা টাকা পরিশোধ না করে দেশ ছেড়েছে সকার। দেশের তেল-গ্যাস খাতে এমন নজির স্থাপনকারী প্রথম কোম্পানি এটি। এদিকে অপর এক আন্তর্জাতিক আদালত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটে (ইকসিড) কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর দায়েরকৃত একটি মামলা এখনো লড়ছে বাপেক্স। ঐ মামলায় চূড়ান্ত রায় শিগিগরই ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

Related Posts

‘পেট্রোল-অকটেন নিয়ে গুজব’ প্রসঙ্গে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ব্যাখ্যা

FERB

এলপিজি মাফিয়াদের হাতের পুতুল বিইআরসি

FERB

আসছে ‘কার হলিডে’

FERB