বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ওয়েবিনারে জ্বালানি উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেছেন, আসছে রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। এবারের গ্রীষ্ফ্মে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট চাহিদা দাঁড়বে। এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন ১৫৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। অতিরিক্ত এলএনজি ছাড়া এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। এই বিবেচনায় বিদেশে স্পট বাজার থেকে দুই লট এলএনজি কেনার ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাড়তি চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে স্পট বাজার থেকে আরও এক লট এলএনজি কেনার বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে।গতকাল শনিবার এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত আগামী গ্রীষ্ফ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকট বিষয়ে এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির ভাষণে জ্বালানি উপদেষ্টা উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, কোনো একটা অভিযোগ ওঠার পর বিতরণ কোম্পানির কর্মীরা নানারকম ব্যাখ্যা দিতে চায়। কিন্তু আমরা জানতে চাই গ্রাহক সন্তুষ্ট কিনা। কারণ যে কোনো ব্যবসায় ভোক্তা সন্তুষ্টিই আসল বিষয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।আলোচ্য বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট হেলালউদ্দিন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন সমিতির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মইন উদ্দিন, ইজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরুণ কুমার সাহা, পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক (ওঅ্যান্ডএম) মাসুম আলম বকসী, ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) গিয়াসউদ্দিন জোয়ারদার এবং প্রবাসী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার আবদুস সালেক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ঘটনার দায় কাস্টমারের ওপর চাপিয়ে এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং বড় শহরগুলোতে কলসেন্টার চালু করতে হবে। সরাসরি কাস্টমারের কথা শুনে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, চাহিদার পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা না গেলে পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে তার প্রস্তুতি রাখতে হবে। কেননা, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও রয়েছে জ্বালানি সরবরাহে সংকট, সঞ্চালন ও বিতরণে সংকট। দোকানদারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর অপ্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ রাখুন। প্রয়োজন না থাকলে এসি বন্ধ রাখুন।মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এবার উত্তরাঞ্চলে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা এবং ঠাকুরগাঁওয়ের নির্মাণাধীন কেন্দ্র উৎপাদনে না এলে লো ভোল্টেজ সমস্যা হতে পারে।অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আমাদের শীত ও গ্রীষ্ফ্মে বিদ্যুতের চাহিদায় বিস্তর ফারাক থাকে। শীতে অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকে। তখন এটা খুব ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধান জরুরি। লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।হেলাল উদ্দিন বলেন, এখন বিদ্যুৎ নিয়ে সমস্যা নেই, সমস্যা অন্যখানে। এখন লোডশেডিং নেই, বিদ্যুৎ বিভ্রাট আছে। এখন বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা হলে ঠিক করার জন্য রিপেয়ারিং বিল দিতে হয়। মার্কেটগুলোতে সিঙ্গেল লাইন না হওয়ায় কমার্শিয়াল বিল ১৬ টাকা দিতে হয়। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছে, কেন তাকে বিদ্যুতের সঙ্গে বাধ্যতামূলক সোলার নিতে হবে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মইনউদ্দিন বলেন, দেশে মোট তিন কোটি ৯১ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের তিন কোটি ১০ লাখই আরইবির। আর হাজার খানেক গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারলে আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়নে পৌঁছাতে পারব। টুকটাক সমস্যা থাকবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা আর হবে না। ব্যবসায়ীদের যেন সমস্যা না হয়, সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি।অরুণ কুমার সাহা বলেন, এবার রমজান ও গ্রীষ্ফ্মকাল একসঙ্গে। এটা সেচ মৌসুম। মনে রাখতে হবে, এ সময় ঝড়-বৃষ্টি হয়। তাই এ সময় আমাদের সতর্ক থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।