ভার্চুয়াল সেমিনারে পিডিবি চেয়ারম্যান
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেছেন, দেশে চাহিদার চেয়ে প্রায় দুইগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। এরপরও গ্রীষ্ফ্ম, রমজান ও সেচ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের লো-ভোল্টেজ সংকট হবে। বিশেষ করে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে এ সমস্যা হবে প্রকট। এ সময় প্রতিদিন ১৩০ কোটি ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন হবে। এর কম গ্যাস পেলে সিরাজগঞ্জের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকেও পুরোটা উৎপাদনে রাখা যাবে না। ফলে উত্তরে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে না।
গতকাল শনিবার এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত ‘কোয়ালিটি পাওয়ার সাপ্লাই টু নর্দান সিটিজ :চ্যালেঞ্জ ফর নেসকো’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে পিডিবি চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সংকট যাতে আরও প্রকট না হয় এ জন্য বড়পুকুরিয়ায় ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ইউনিট চালু রেখে কয়লার মজুদ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈয়দপুরে নির্মাণাধীন এনার্জিপ্যাকের ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের প্রথমে উৎপাদনে এলে সংকট কিছুটা কমে আসতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নেসকোর চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব একেএম হুমায়ুন কবির, নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিরুল ইসলাম, বগুড়া চেম্বার অব কর্মাসের সহসভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী। এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের উপস্থাপনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নেসকো তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিরিন ইয়াসমিন।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু এখনও শতভাগ নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন হয়নি। রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে। তার আগে উত্তরাঞ্চলের সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে নেওয়ার জন্য পিজিসিবির প্রতি আহ্বান জানান।
হুমায়ুন কবির বলেন, নেসকো কার্যত উত্তরের শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও ২৭ হাজার সেচ গ্রাহক তার পাম্প চালানোর জন্য আমাদের ওপর নির্ভরশীল। ফলে আগামী গ্রীষ্ফ্মে সেচ ও রমজান মাস বিবেচনায় রেখে নেসকোকে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
বেলায়েত হোসেন বলেন, উত্তরাঞ্চলের লো-ভোল্টেজ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে আরও দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। এর মধ্যে উন্নত সঞ্চালন নেটওয়ার্ক হওয়ার পাশাপাশি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে, ভারতের আদানির ঝাড়খণ্ড বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসতে শুরু করবে, জিএমআইর সঙ্গে চুক্তির আওতায় নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আসবে। এর আগ পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের জন্য শতভাগ সুসংবাদ দেওয়া যাচ্ছে না।
জাকিরুল ইসলাম দাবি করেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্মার্ট মিটার স্থাপন শেষ করা সম্ভব এবং পুরো ডিজিটালাইজেশনের কাজ শেষ হলে সিস্টেম লস তিন শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এতে কোম্পানির বার্ষিক কমপক্ষে ৮৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে বর্তমানে নেসকোর ৪০ শতাংশ গ্রাহক অনলাইনে বিল পরিশোধ করছেন। এটিকে পুরো পেপারলেস করা সম্ভব হলে বার্ষিক আরও ৫৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তবে কোয়ালিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়ার জন্য পিজিসিবির কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী দাবি করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৪০০ কেভি ক্ষমতার দুটি গ্রিড রহনপুর ও রূপপুর থেকে বগুড়ায় আসবে। আবার বগুড়া থেকে ২৩০ ও ১৩২ কেভি গ্রিড বিভিন্ন জেলায় যাবে। পুরো উত্তরাঞ্চলে ২৪টি গ্রিড সাব-স্টেশন স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে উত্তরাঞ্চল এর ফল পেতে শুরু করবে এবং তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরাপদ হবে।