দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদ্যুত্ উত্পাদন সক্ষমতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী দেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা আগে থেকেই বেশি। এখন চাহিদা আরো কমে যাওয়ায় বড়সংখ্যক কেন্দ্রকে দীর্ঘ সময় অলস বসে থাকতে হচ্ছে। শীতকালের কারণে আবাসিক খাতে বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস এবং মহামারি করোনার প্রভাবে শিল্প উত্পাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পিডিবির দৈনন্দিন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩০ ডিসেম্বর দিনে পিক আওয়ারে দেশে ৭ হাজার ৩৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদিত হয়। ঐ দিন সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে উত্পাদিত হয় ৮ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট বিদ্যুত্। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিদ্যুত্ উত্পাদনের ধারা এমনই। অথচ দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা এখন ২০ হাজার ৫৯৫ মেগাওয়াট। আর ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ এ সক্ষমতা ২৩ হাজার ৫৪৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। যদিও সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা সমান্তরালে না বাড়ায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুত্ বিভ্রাট-লোডশেডিং বন্ধ হয়নি।
বিদ্যুত্ চাহিদা কমার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বাণিজ্যিক অফিস এখনো পুরোপুরি খুলেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ বন্ধ। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পুরোদমে উত্পাদন শুরু হয়নি। শীতের কারণে বাসাবাড়িতে এসি ও ফ্যানের ব্যবহার কমেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে দেশের প্রায় সবগুলো তেলচালিত বিদ্যুেকন্দ্র বন্ধ রেখেছে সরকার। গ্যাসসংকট কমাতে আনা ব্যয়বহুল এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানিও সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) গত ৩০ ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ঐ দিন দেশের সব ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল অনেকগুলো ফার্নেস তেলচালিত কেন্দ্রও। সব মিলিয়ে এগুলোর বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ১ হাজার ১৪০ মেগাওয়াট।
আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানিতে ন্যূনতম নীতি গ্রহণ করেছে। দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩৯ কোটি ঘনফুটেরও কম এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। যদিও দিনে ১০০ কোটি ঘনফুটেরও বেশি ধারণক্ষমতা রয়েছে মহেশখালীতে থাকা দুই এলএনজি টার্মিনালের। অথচ দেশে গ্যাসসংকটের কারণে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছিল।
পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের চেয়ে তেলচালিত কেন্দ্রে উত্পাদিত বিদ্যুতের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই উত্পাদন খরচ কমাতে অধিকাংশ তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে মালিক-উদ্যোক্তাদের বলা হয়েছে। তবে ক্যাপাসিটি বাবদ তাদেরকে অর্থ দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুত্ না কিনলেও স্থাপনা ও পরিচালন খরচের জন্য এ চার্জ পরিশোধ করা হয়।
এদিকে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত্ উত্পাদন না কমিয়ে বরং বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। দেশে সবচেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি শেভরনকে খনি থেকে উত্পাদন বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক উত্পাদনের পরিমাণ ১ হাজার ৩৫১ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যদিকে এলএনজি আমদানি না করলেও তারা দুই ভাসমান টার্মিনালকে মাশুল দেওয়া হচ্ছে। এ টার্মিনালগুলোর একটির মালিকানা পেট্রোবাংলার নিজের, অন্যটি বেসরকারি কোম্পানি সামিটের। দুই টার্মিনালই ইজারা দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির কাছে।