লুৎফর রহমান কাকন : কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চিটাগাং পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ ফেরত দিতে সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পরামর্শক সংস্থা পাওয়ার সেল। চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায় ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন পায় চিটাগাং পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। বাণিজ্যিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিভাগের শর্ত অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে সরকারের কোষাগারে গ্যারান্টির অর্থ জমা রাখতে হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ ফেরত দিতে সুপারিশ করেছে পাওয়ার সেল। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বিদ্যুৎ বিভাগে লেখা এক চিঠিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জমা দেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা ফেরত দিতে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্র চিটাগাং পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহারের প্রস্তাবনা থাকলেও এখন পর্যন্ত কয়লা আমদানি, সরবরাহ ও সংগ্রহ রাখার কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এ ছাড়া জটিলতা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে কয়লা খালাসের। প্রস্তাবিত এলাকায় কয়লা খালাসের জেটি সুবিধা নেই। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানির ব্যবস্থা করতে ফেনী নদী থেকে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ফেনী নদীর পাশের খাসজমি বরাদ্দ ও আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপলাইন বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই লক্ষ্যে রেলওয়ের জমি ব্যবহারের অনুমোদনও মেলে। তবে পাইপলাইন স্থাপনের দর চূড়ান্ত না হওয়া এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বিক্রয় ক্রয়ের চুক্তি ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালন চুক্তি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব
হয়নি। এসব বিষয় অবহিত করে পাওয়ার সেলকে চিঠি দেওয়া হয় কোম্পানির পক্ষ থেকে।
পাওয়ার সেল থেকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, চিটাগাং পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে জ্বালানির ধরন পরিবর্তন করে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একই সঙ্গে ক্ষমতার দুই ধাপে ১৫০ মেগাওয়াট থেকে ৩০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল স্থাপনের অনুমোদন চেয়ে পাওয়ার সেলে আবেদন করে। পাওয়ার সেল স্পন্সর কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছে, পলিসি গাইডলাইন ফর এনহেন্সমেন্ট অব প্রাইভেট প্র্যাকটিসিপেশন ইন দ্য পাওয়ার সেক্টর অনুযায়ী দেশি প্রাকৃতিক গ্যাস দ্রুত শেষ হয়ে আসায় কোম্পানিটির আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। নীতিমালা অনুযায়ী গ্যাসভিত্তিক বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পাওয়ার সেল চিঠিতে বলেছে, গত ৯ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ পরিকল্পনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় প্রাইভেট পাওয়ার জেনারেশন পলিসি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার রিনিউঅ্যাবল এনার্জি পলিসি ছাড়া সব পলিসি এক করে ইউনিফর্ম পাওয়ার জেনারেশন পলিসি প্রস্তুত করছে। ইতোমধ্যে একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়। সেখানেও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে সার্বিক বিবেচনায় চিটাগাং পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড স্পন্সর কোম্পানিকে নতুন কোনো জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদন সুযোগ না দিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টির জমার অর্থ ফেরত দিতে অনুরোধ করে পাওয়ার সেল।