Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১৭ হাজার ৯শ কোটি টাকা

ফয়েজ আহমেদ তুষার: সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে আছে প্রায় ১৭ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। আদায়কারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বকেয়া বিল আদায় করা হচ্ছে, আবার প্রতি মাসে নতুন বিল হচ্ছে, যা চলমান প্রক্রিয়া। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, মাসিক আদায়ের হার, নতুন বিলের চেয়ে কম হওয়ায় বকেয়া বাড়ছে। এদিকে চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানেই সিস্টেম লস বেড়েছে।

মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার আওতায় বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্রাহকের কাছে বকেয়া জমা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। এদিকে বিদ্যুৎ খাতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্রাহকের কাছে বকেয়া পড়েছে প্রায় ৮ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বকেয়া আদায়ে তৎপরতা চালালেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অব.) বকেয়া বিলের বিষয়ে গতকাল বিকেলে সংবাদকে জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে গ্রাহকের কাছে কয়েক মাসের বিল বকেয়া পড়েছে। এরমধ্যে আবাসিক গ্রাহকও আছেন, আবার শিল্প গ্রাহকও আছেন। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে এতদিন ছাড়া দেয়া হলেও, আমরা এখন বিল আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছি। বিল না দিলে প্রয়োজনে লাইন কেটে দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।’

এদিকে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নানা কারণ দেখিয়ে বেসরকারি অনেক শিল্প উদ্যোক্তা, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে টালবাহানা করছেন। সরকার তাদের অনেককেই কিস্তি করে বিল দেয়ার সুযোগ দিলেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের অনেকেই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় বকেয়া আদায়ে কঠোর হতে পারছে না সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানি।

গ্যাস বিল বকেয়া

বকেয়া ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা গ্যাস বিলের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে পড়ে আছে ২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা এবং বেসরকারি বকেয়া ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। সরকারি ক্যাপটিভ পাওয়ারের বকেয়া ৬৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ক্যাপটিভ মালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে আছে ১ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা।

সরকারি-বেসরকারি সার কারখানাগুলোর মধ্যে গ্যাস বিল বকেয়া প্রায় ২২৭ কোটি টাকা, শিল্প-কারখানাগুলোতে বকেয়া ১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় শিল্প-কারখানাগুলোতে বকেয়া ৪৩ কোটি টাকা এবং শিল্পপতিদের কাছে বকেয়া ১ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক খাতের প্রতিষ্ঠনের মধ্যে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে বকেয়া ২১ কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বকেয়া ৭৭ কোটি টাকা। আবাসিক খাতে বকেয়া ২ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। এছাড়া সিএনজি খাতে ফিড গ্যাস বিল বকেয়া ৮৫৪ কোটি টাকা এবং চা বাগানে বকেয়া আছে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। তবে বিল আদায় একটি চলমান পক্রিয়া হওয়ায় বকেয়া বিলের হিসাব কম-বেশি হতে পারে যেকোন সময়।

বিদ্যুৎ বিল বকেয়া

এদিকে বিদ্যুৎ খাতের বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকের কাছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওনা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গ্রাহকদের কাছে পিডিবির বকেয়া পাওনা প্রায় ১ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা, আরইবির ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা, ডিপিডিসির বকেয়া ১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা, ডেসকোর বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ৭৫২ কোটি টাকা, ওজোপাডিকো’র বকেয়া ৪৪৯ কোটি টাকা, নেসকোর বকেয়া ৬৮৬ কোটি টাকা।

পল্লী বিদ্যুতের ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা বকেয়ার বিষয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন (অব.) সংবাদকে বলেন, ‘অঙ্কে বিলটা বড় মনে হলেও এটি পল্লী বিদ্যুতের প্রায় দেড় মাসের বিলের সমপরিমাণ। আমাদের প্রতি মাসে আড়াই হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎও বিক্রি হয়। গত সেপ্টেম্বরে আমরা ২ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা বিল আদায় করেছি। আশা করি এই বকেয়া আগামী দুই মাসের মধ্যে আদায় করা সম্ভব হবে।’

রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কোন কোন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বকেয়া আদায়ে করতে সমস্যা হচ্ছে কিনা- সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আসলে বিষয়টা এভাবে বলা যাবে না। অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠানে বকেয়া রয়েছে। আমারা তাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। অনেকে দিয়ে দিচ্ছেন, আবার অনেকে গড়িমশি করছেন। তবে সবার বিলই পর্যায়ক্রমে আদায় করা হবে।’

 

সিস্টেম লস বেড়েছে

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তিন মাসে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) সিস্টেম লস কমেছে। বেড়েছে রাষ্ট্রীয় অপর ৫টি বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম লস। এরমধ্যে নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) সিস্টেম লস সবচেয়ে বেশি এবং বেড়েছেও বেশি।

গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হিসাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সিস্টেম লস দাঁড়িয়েছে গড়ে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা গত (২০১৯-২০২০) অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। একই সময়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সিস্টেম লস দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) সিস্টেম লস ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) সিস্টেম লস দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।

বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, গত অর্থবছরে আরইবি’র সিস্টেম লস ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, ডিপিডিসি’র ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ডেসকো’র ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, ওজোপাডিকো’র ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং নেসকোর সিস্টেম লস ছিল ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ।

সিস্টেম লসের বিষয়ে আরইবির চেয়ারম্যান বলেন, পল্লী বিদ্যুতে সিস্টেম লস চলতি অর্থবছরে আরও কমে আসবে। গত চার মাসের হিসাব গড় করে সিস্টেম লস কিছুটা বেশি হয়েছে গরমের কারণে। শীতের পর পুরো বছরের গড়ে তা কমে আসবে। কারণ যত বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি হয় সিস্টেম লস তত বাড়ে।’

Related Posts

শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পারা সরকারের বড় সাফল্য

FERB

জ্বালানি তেলের ভ্যাট ও এটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব, কমবে আমদানি খরচ

FERB

জ্বালানি বিভাগের এডিবি বাস্তবায়ন ৯২ শতাংশ

FERB