হাসনাইন ইমতিয়াজ: সৌরবিদ্যুতের ক্ষুদ্র গ্রিড (সোলার মিনি গ্রিড) এলাকায় ঢুকে পড়েছে সরকারি বিতরণ কোম্পানি। ফলে গ্রাহক হারাচ্ছেন দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সৌরবিদ্যুতের উদ্যোক্তারা। বিদ্যুৎ বিক্রি কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন কোনো কোনো উদ্যোক্তা। ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এ খাতের হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ।
সোলার মিনি গ্রিড উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মিনি গ্রিড এলাকায় প্রাপ্ত লোড না থাকায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে না হওয়ায় বিদ্যুৎ বিক্রির পরিমাণও প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। উদ্যোক্তারা আরও জানিয়েছেন, তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাসিক বিক্রয় মূল্য থেকে মিনি গ্রিডের পরিচালন, সংরক্ষণ ব্যয় ইত্যাদি সব খরচ বাদ দিয়ে যে টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তা দিয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (ইডকল) ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়। আয় কমে যাওয়ায় ইডকলের ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। এতে তারা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন। ফলে উদ্যোক্তাদের অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোড কমে যাওয়ার জন্য উদ্যোক্তারা পলল্গী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের (ওজোপাডিকো) মতো বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকা কে দায়ী করেছেন। তারা জানান. সরকারের উৎসাহে দুর্গম চরাঞ্চল, দ্বীপ ও পাহাড়ে যেখানে গ্রিড বিদ্যুৎ পৌঁছানো কষ্টকর, এমন স্থানের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সোলার মিনি গ্রিডের যাত্রা শুরু। গত এক দশকে ২৫টির মতো মিনি গ্রিড স্থাপিত হয়েছে। এদের সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ মেগাওয়াটের মতো। উদ্যোক্তারা জানান, আরইবি, পিডিবি এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়েই ২০ বছরব্যাপী মিনি গ্রিড স্থাপনের কাজ শুরু করেন তারা। চুক্তি অনুসারে ইডকলের অনুদান, ঋণ ও সমপরিমাণ বিনিয়োগ করে মিনি গ্রিড স্থাপন করেন। এরপর সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেন।
সোলার মিনি গ্রিড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসএমএবি) চেয়ারম্যান ডিএম মজিবর রহমান সমকালকে বলেন, তারা যখন উদ্যোগ নেন তখন বলা হয়েছিল দুর্গম অঞ্চলে শুধু তারা সেবা দেবেন। যেহেতু এসব অঞ্চলে সাধারণ গ্রিড নেওয়া দুস্কর। কিন্তু সরকারের ‘সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ পরিকল্পনার আওতায় বিতরণ কোম্পানিগুলো সোলার মিনি গ্রিডের এলাকাতেও লাইন নিয়ে গেছে। আরইবি, পিডিবি চর এলাকায় মিনি গ্রিড উদ্যোক্তাদের গ্রাহকের ঘরেই আবার মিটার স্থাপন করে জোরপূর্বক বিদ্যুতায়ন করছে। সোলার মিনি গ্রিডের চেয়ে গ্রিড বিদ্যুতের দাম কম হওয়ায় গ্রাহক গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ফলে মিনি গ্রিডের গ্রাহক কমছে।
সমস্যার সমাধান চেয়ে সম্প্রতি মিনি গ্রিড অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়- তারা দীর্ঘ ৮/১০ বছর ধরে প্রত্যন্ত অফগ্রিড চর এবং দ্বীপ এলাকায় মিনি গ্রিড সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছেন। এই বিদ্যুতের কারণে এসব এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। মিনি গ্রিডের কারণে এসব চর ও ও দ্বীপের ২০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা কম্পিউটার শিখতে পারছে। শিল্পকারখানা স্থাপিত হচ্ছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। কিন্তু সরকারি বিতরণ কোম্পানিগুলো জোর করে বিদ্যুতায়নের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গ্রাহক হ্রাস পাওয়ায় আয় কমে গেছে।
মিনি গ্রিড অ্যাসোসিয়েশন সমস্যার সমাধানে তাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের একটা ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে তা বিতরণ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কিনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরইবি চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন সমকালকে বলেন, মিনি গ্রিডগুলো যে উদ্দেশ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। তারা অধিকংশ এলাকায় ঠিকমতো সেবা পৌঁছায়নি। এদের বিদ্যুতের মূল্য অনেক বেশি। সরকার সুলভে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে চায়। এ জন্যই সারাদেশকে গ্রিড বিদ্যুতের আওতায় আনা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, সোলার মিনি গ্রিডের উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে একটি কমিটি গঠন করেছে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( স্রেডা)। স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সমকালকে বলেন, একটা কমিটি কাজ করছে। তারা মিনি গ্রিড উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বসেছেন। আশা করা যাচ্ছে, একটা দাম চূড়ান্ত হবে। বিতরণ কোম্পানিগুলো সে দামে মিনি গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কিনবে।