Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

দশ বছর মেয়াদ বাড়লো গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের

গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের (জিডিএফ) মেয়াদ আরও ১০ বছর বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের পরিসর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে আগামী সপ্তাহে গেজেট প্রকাশিত হতে পারে বলে বার্তা২৪.কম-কে নিশ্চিত করেছেন জ্বালানি বিভাগের উপ-সচিব ড. মুহা. মনিরুজ্জামান।

বর্তমান তহবিলের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তেল-গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য জিডিএফ গঠনের আদেশ দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ২০০৯ সালের ৩০ জুলাইয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির আদেশের সঙ্গে সঙ্গে জিডিএফ এর জন্য ভোক্তাদের উপর প্রতি ঘনমিটারে ৪৬ পয়সা অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করা হয়। এই চার্জ ২০০৯ সালের আগস্ট থেকে কার্যকর করা হয়। ওই গণশুনানিতে বলা হয়েছিল দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন সংকটের কারণে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে না। তাই এই তহবিল ব্যবহার করে প্রকল্প নিতে পারবে বাপেক্স।

অনেক গোপনীয়তার সঙ্গে এই তহবিল সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। অনেক রকম কাটাছেঁড়ার কথা বলা হলেও মন্ত্রণালয় কিংবা পেট্রোবাংলার রাখরাখ ঢাকঢাক অবস্থা। প্রথম দিকে অনুসন্ধান ও উন্নয়নে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার বাপেক্সের রিগ সংস্কারের ক্ষেত্রে এই তহবিল ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্প অনুমোদন কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতোদিনে পেট্রোবাংলার নেতৃত্বে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হতো।

এক প্রশ্নের জবাবে উপ-সচিব ড. মুহা. মনিরুজ্জামান বলেন, বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখানে ভাষাগত কিছু পরিবর্তন করে, আরও সহজবোধ্য করা হয়েছে। আর এই তহবিলের অর্থায়নে কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেগুলো ২০২৪-২৫ সাল নাগাদ দিয়ে শেষ হবে। এসব প্রকল্পের অনিশ্চয়তা দূর করতে জিডিএফ’র মেয়াদ আরও ১০ বছর বাড়ানো হয়েছে।

তবে খসড়া নীতিমালা সংক্রান্ত সভায় অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে বলেছিলেন, বৈঠকে উত্থাপিত সংশোধনীতে এই ফান্ডকে গ্যাস বিক্রির উদ্বৃত্ত অর্থ হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া এই তহবিল এলএনজি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার সুযোগ রাখতে চায় মন্ত্রণালয়। যদিও বৈঠকেই এ বিষয়ে আপত্তি উঠেছিল। পরে কি করা হয়েছে সে বিষয়ে সূত্রটি নিশ্চিত করতে পারেনি।

উল্লেখ্য, বিইআরসির গণশুনানিতে জিডিএফ ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করেছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম। তিনি বলেছিলেন দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন সংকটের কারণে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে না। প্রকল্প নিয়ে বিদেশি সাহায্যের জন্য বসে থাকতে হয়, এতে কাজে অনেক বিলম্ব হয়। আর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে দাতাদের নানা রকম শর্ত ও ফরমায়েশ থাকে। এতে অনেক সময় প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়, এই ফান্ড হবে সুদমুক্ত। এই ফান্ডের অর্থ দিয়ে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স প্রকল্প গ্রহণ করবে যাতে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো যায়। যাতে সংকট দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়, এতে ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস পাবেন।

যদিও পরে ৪ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করা হয়। কথা ছিল এই ফান্ডের অর্থায়নে প্রকল্প নিতে গেলে যথাযথ ভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং বিইআরসি পুর্বানুমতি নিতে হবে। পরে এই তহবিলের যাচ্ছে তাই ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বছর আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো জমা হওয়ার কথা। করোনাকালে সরকারও এই তহবিলে থাবা বসিয়েছে। এই ফান্ড থেকে ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) হারুন অর রশীদও বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমার জানা মতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসছে না। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি এই নীতিমালার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তাই এর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। হয়তো টুকটাক কিছু সংশোধনী থাকতে পারে।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেছেন, অন্যায় কিছু করা হলে কোর্টে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এই ফান্ডের অনেক নয়-ছয় করা হয়েছে। ভোক্তারা এই ফান্ড গঠন করার জন্য টাকা দিচ্ছে। কিন্তু ভোক্তাদের স্বার্থ দেখা হয়নি। এই টাকা জনগণের টাকা, এখানে হাত দেওয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয় কিংবা পেট্রোবাংলাকে দেওয়া হয়নি।

Related Posts

বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে সমুদ্র উপকূলে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ

FERB

বৈদ্যুতিক যানবাহনের চার্জিং নীতিমালা গ্রাহকবান্ধব হতে হবে : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

FERB

জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণ গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যর্থতা

FERB