দেশে গ্যাসের বড় গ্রাহকদের আঙিনায় ইলেকট্রিক ভলিউম কারেক্টর (ইভিসি) মিটার স্থাপনের কাজ এগোচ্ছে না। নির্ধারিত সময়সীমায় সব গ্রাহকদেরকে ইভিসি মিটার দিতে পারেনি গ্যাস বিতরণকারী ছয়টি সরকারি কোম্পানি। ফলে নির্ধারিত চাপে, তাপে ও মাপে গ্যাস পাচ্ছেন কি না তা জানতে পারছেন না তারা। গ্রাহকদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, তাদের নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম গ্যাস দিয়ে বেশি বিল করছে কোম্পানিগুলো। আর বৈধ গ্রাহকদের পরিমাণে কম গ্যাস দিয়ে বেঁচে যাওয়া গ্যাস অবৈধ গ্রাহকদের দিচ্ছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গ্যাসের সাত শ্রেণির গ্রাহক রয়েছে। এগুলো হলো—শিল্প, বাণিজ্যিক, সার, বিদ্যুত্, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি ও আবাসিক। সব মিলিয়ে বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ৪৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বাদে বাকি পাঁচ শ্রেণি মিলিয়ে মোট গ্রাহকসংখ্যা ২৩ হাজারের মতো। এই পাঁচ শ্রেণির গ্রাহকদের আঙিনায় ইলেকট্রিক ভলিউম কারেক্টর (ইভিসি) মিটার স্থাপনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সবগুলো বিতরণ কোম্পানি মিলে এখন পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি ইভিসি মিটার স্থাপন করতে পারেনি।
গ্যাসের চাপ ও তাপমাত্রার তারতম্য হওয়ার কারণে গ্রাহকদের মিটারে প্রকৃত গ্যাস ব্যবহারের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। চাপ ও তাপের নিরিখে গ্যাস প্রবাহের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় ও সংরক্ষণ করা যায় ইভিসি মিটারে। ফলে গ্যাসের সঠিক সিস্টেম লস পরিমাপ, গ্যাস ব্যবহারের সচেতনতা এবং আস্থাও বৃদ্ধি পায়। তাই ২০১৫ সালের আগস্টে শিল্প, সিএনজিসহ বড় গ্রাহকদের আঙিনায় ইভিসি মিটার স্থাপনের নির্দেশ দেয় জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ জন্য সর্বোচ্চ তিন বছর সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই তিন বছর পেরিয়ে আরো তিন বছর পার হতে চললেও অগ্রগতি সামান্য।
এফবিসিসিআইএর সহসভাপতি, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শিল্পমালিকরা দীর্ঘদিন ধরেই ইভিসি মিটার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে। গ্যাস কোম্পানিগুলোর কাছে আবেদন করেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। অথচ এটি বাস্তবায়ন করা গেলে গ্রাহকদের পাশাপাশি সরকারের স্বার্থও সংরক্ষিত থাকত।
সম্প্রতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বিইআরসি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ইভিসি মিটার গ্রাহকদের প্রকৃত পরিমাণ গ্যাস প্রাপ্তি ও গ্যাসের প্রকৃত ব্যবহার অনুযায়ী বিল প্রদান নিশ্চিত করে। একইসঙ্গে লোপ্রেসারজনিত অবস্থায় গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রকৃত সিস্টেম লস নিরূপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ইভিসি মিটার স্থাপন এবং সে অনুযায়ী বিলিং নিশ্চিতকরণের বিষয়ে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর অগ্রগতি এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত নয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইভিসি মিটার স্থাপনে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর অনীহা রয়েছে। কেননা বৈধ গ্রাহকদের অনেককে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম দিয়ে বেঁচে থাকা গ্যাসই মূলত অবৈধ গ্রাহকদের সরবরাহ করা হয়। বিতরণ কোম্পানিগুলোর হিসাব মতেই দেশে এখনো ১১ লাখের বেশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানি তিতাস গ্যাসের অবৈধ গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। গত সাত বছরে অন্তত ২ হাজার কিলোমিটার অবৈধ বিতরণ ও সার্ভিস লাইন উচ্ছেদ করেছে কোম্পানিটি। ইভিসি মিটার চালু হলে এ বিপুলসংখ্যক অবৈধ গ্রাহককে গ্যাস দেওয়া সম্ভব হবে না।