Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

বিতর্কিত খসড়া অর্গানোগ্রাম আটকে দিয়েছে বাপেক্স বোর্ড

বিতর্কিত খসড়া অর্গানোগ্রাম অনুমোদন দেয়নি বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড) বোর্ড। রিভিউ করার জন্য সাবেক এমডি আতিকুজ্জামানের নেতৃত্বে রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিকে আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রিভিউ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হয় প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সেখানে খসড়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ওঠে। একাধিক সদস্য একে ত্রুটিপূর্ণ বলে মতামত দেন। বোর্ড সভাপতি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান চমৎকার ভূমিকা পালন করেন। তিনিও বাপেক্সকে আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানি করার তাগিদ দিয়ে সেভাবে অর্গানোগ্রাম রিভিউ করার পরামর্শ দেন।

 

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, অর্গানোগ্রামের কাজ এখনও আঁতুড় ঘরে বলতে পারেন। এখনও বলার মতো কিছু হয়নি। বোর্ড মিটিংয়ে রিভিউ কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি নিয়ে কৌশলী উত্তর দেন। বলেন, এখনও মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্র হাতে পাইনি। সে কারণে কিছু বলতে পারছি না।

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য পদ রিজার্ভ প্রশ্নে বাপেক্স এমডি বলেন, বিষয়টি অর্গানোগ্রামের পর সার্ভিস রুল (তফসিল) প্রণয়নের সময়ে ঠিক হবে। এখন শুধু পদের সংখ্যা ও বিভাগ নির্ধারণ করা হবে।

তবে বাপেক্সের একাধিক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, বিষয়টি হয়তো কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। অর্গানোগ্রামে যদি গ্রেড-১০ (সেকেন্ড ক্লাস) সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় তাহলেও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার আগ্রহী হবেন না। তারা গ্রাজুয়েশন করে এসে দ্বিতীয় শ্রেণির জবে আগ্রহী হবেন না। একটি মাত্র সম্ভাবনা রয়েছে গ্রেড-৯ এ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের সরাসরি নিয়োগের অনুপাত বাড়ানো।

ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, বাপেক্সের বেতন বৈষম্যও কম না। এই বৈষম্য দূর করতে না পারলে বাপেক্সের আইওসি (আন্তর্জাতিক ওয়েল কোম্পানি) হয়ে ওঠার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এমনকি দেশীয় পাওয়ার সেক্টরের কোম্পানির সমকক্ষ হয়ে ওঠার কঠিন হবে। বেতন বৈষম্য এমন পর্যায়ে গেছে বাপেক্সের লোকজন বিদ্যুতের কোম্পানিগুলোতে চলে যাচ্ছে। এন্ট্রি পদ (গ্রেড-১১) ট্রেইনি ডিলারের বাপেক্সে বেসিক হচ্ছে ১৬ হাজার টাকা। সম গ্রেডের পদে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বেসিক দিচ্ছে ৩৮ হাজার টাকা। আবার গ্রেড-৯ এ বাপেক্স দিচ্ছে ২২ হাজার টাকা, সেখানে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) বেসিক হচ্ছে ৫২ হাজার টাকা। কেনো একজন প্রকৌশলী এখানে পড়ে থাকবে।

গোড়ায় গলদ রেখে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের প্রস্তুতি। ব্রকেট থেকে বের হতে না পারলে আইওসি’র (আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি) হয়ে ওঠা সুদূর পরাহত। এমন একটি আগাম রিপোর্ট ২৮ অক্টোবর প্রকাশ করে বার্তা২৪.কম।

ওই রিপোর্টে বলা হয় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য পদ রিজার্ভ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে ন্যূজ করে রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত (সংশোধিত) অর্গনোগ্রামেও একই ত্রুটি রেখে দেওয়া হয়েছে। খোদ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের আধিক্য এর পেছনে ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংখ্যাধিক্য ডিপ্লোমা প্রকৌশলী অনুজদের পথ সুগম রাখতে কোম্পানিকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটির প্রধান চার বিভাগের শীর্ষ পদে আসীন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা। অর্গানোগ্রামে এমন জটিল পদ্ধতি করে রাখা হয়েছে এসব পদে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের আসার পথ বেশ জটিল। ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও বেশিরভাগ সময় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা নিয়োগ পেয়ে আসছেন।

রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটিতে খনন বিভাগের এন্ট্রি পদ (গ্রেড-১০) ট্রেইনি ডিলার শুধুমাত্র ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য নির্ধারিত। উপরের গ্রেড-৯ এ মাত্র ৩৩ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের। অবশিষ্ট ৬৭ শতাংশ রিজার্ভ রাখা হয়েছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের প্রমোশন দেওয়ার জন্য। গ্রেড-১০ এ ৩ বছর চাকরির পর প্রমোশনের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে গ্রেড-৯ থেকে প্রমোশনের জন্য ৪ বছর অভিজ্ঞতা বলা হয়েছে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা অনেক আগেই শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরিতে যোগদান করছেন। আর পরে নবম গ্রেডে যোগ দিলেও পিছিয়ে পড়ছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা। উপরের দিকে পদ সীমিত, অন্যদিকে সিনিয়রিটি পাওয়া ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা নানাবিধ সুবিধা ভোগ করে আসছে। এমডি ও জিএম পদের জন্য সিরিয়ালে আসার আগেই অবসরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা। একইভাবে প্রকৌশল বিভাগেও গ্রেড-১০ এ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য রিজার্ভ রাখা হয়েছে। এখানে গ্রেড-৯ এ প্রমোশন থেকে ৩৩ এবং ৬৭ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে।

বাপেক্সে খনন বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কর্মরত ৪৮ জনের মধ্যে ৪৭ জনই ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। মাত্র ১ জন রয়েছেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। বাপেক্সের ইতিহাসে মাত্র ১ জন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার খনন বিভাগে সরাসরি নিয়োগ পেয়েছে। বিপিডিবিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে ১৫ থেকে ২০ বছর পর ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাপেক্সে বেশ উদার।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যতিক্রম বাপেক্সে অদ্ভূত বৈষম্য বিরাজমান। ট্রেইনি ড্রিলার পদ থেকে মাত্র ৩ বছরে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী ব্যবস্থাপক (খনন) হয়ে পরবর্তীতে তারাই অন্যান্য বিভাগের নেতৃত্বে চলে যাচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠানটি ৩০ বৎসর অতিবাহিত হলেও আন্তর্জাতিক মানের এক্সপ্লোরেশন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেনি। কারণ ওয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েল প্ল্যানিং, কেসিং ডিজাইন, ওয়েল কন্ট্রোলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূক্ষ্ম কারিগরি কাজে দ্রুত ও বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার মতো দক্ষ লোকবলের ঘাটতির কারণে।

সম্প্রতি এক সেমিনারে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আগে তাদের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে তারা কি হতে চায়। ২০১৫ সালে বলেছিলাম অর্গানোগ্রাম আপডেট করতে। ৬ বছর পেরিয়ে গেছে তারা করতে পারেনি। প্রতিমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনে তোড়জোড় দেখা যায়।

Related Posts

বায়ু বিদ্যুৎ: মানচিত্রে উৎসাহ, বাস্তব উৎপাদনে ভাটা

FERB

‘আমদানি নির্ভর জ্বালানি খাতে স্বস্তি আনতে মরিয়া সরকার’

FERB

বড়পুকুরিয়া-ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার উদ্যোগ

FERB