Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

বাপেক্সের অর্গানোগ্রামে গোড়ায় গলদ

গোড়ায় গলদ রেখে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের প্রস্তুতি। ব্রকেট থেকে বের হতে না পারলে আইওসি’র (আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি) হয়ে ওঠা সুদূর পরাহত মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষ করে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য পদ রিজার্ভ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে ন্যূজ করে রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত (সংশোধিত) অর্গনোগ্রামেও একই ত্রুটি রেখে দেওয়া হয়েছে। খোদ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের আধিক্য এর পেছনে ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংখ্যাধিক্য ডিপ্লোমা প্রকৌশলী অনুজদের পথ সুগম রাখতে কোম্পানিকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটির প্রধান চার বিভাগের শীর্ষ পদে আসীন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা। অর্গানোগ্রামে এমন জটিল পদ্ধতি করে রাখা হয়েছে এসব পদে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের আসার পথ বেশ জটিল। ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও বেশিরভাগ সময় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা নিয়োগ পেয়ে আসছেন।

রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটিতে খনন বিভাগের এন্ট্রি পদ (গ্রেড-১০) ট্রেইনি ডিলার শুধুমাত্র ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য নির্ধারিত। উপরের গ্রেড-৯ এ মাত্র ৩৩ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের। অবশিষ্ট ৬৭ শতাংশ রিজার্ভ রাখা হয়েছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের প্রমোশন দেওয়ার জন্য। গ্রেড-১০ এ ৩ বছর চাকরির পর প্রমোশনের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে গ্রেড-৯ থেকে প্রমোশনের জন্য ৪ বছর অভিজ্ঞতা বলা হয়েছে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা অনেক আগেই শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরিতে যোগদান করছেন। আর পরে নবম গ্রেডে যোগ দিলেও পিছিয়ে পড়ছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা। উপরের দিকে পদ সীমিত, অন্যদিকে সিনিয়রিটি পাওয়া ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা নানাবিধ সুবিধা ভোগ করে আসছে। এমডি ও জিএম পদের জন্য সিরিয়ালে আসার আগেই অবসরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা। একইভাবে প্রকৌশল বিভাগেও গ্রেড-১০ এ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য রিজার্ভ রাখা হয়েছে। এখানে গ্রেড-৯ এ প্রমোশন থেকে ৩৩ এবং ৬৭ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে।

বাপেক্সে খনন বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কর্মরত ৪৮ জনের মধ্যে ৪৭ জনই ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। মাত্র ১ জন রয়েছেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। বাপেক্সের ইতিহাসে মাত্র ১ জন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার খনন বিভাগে সরাসরি নিয়োগ পেয়েছে। বিপিডিবিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে ১৫ থেকে ২০ বছর পর ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাপেক্সে বেশ উদার।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যতিক্রম বাপেক্সে অদ্ভূত বৈষম্য বিরাজমান। ট্রেইনি ড্রিলার পদ থেকে মাত্র ৩ বছরে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী ব্যবস্থাপক(খনন) হয়ে পরবর্তীতে তারাই অন্যান্য বিভাগের নেতৃত্বে চলে যাচ্ছেন।।

প্রতিষ্ঠানটি ৩০ বৎসর অতিবাহিত হলেও আন্তর্জাতিক মানের এক্সপ্লোরেশন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেনি। কারণ  ওয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েল প্ল্যানিং, কেসিং ডিজাইন, ওয়েল কন্ট্রোলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূক্ষ্ম কারিগরী কাজে দ্রুত ও বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো দক্ষ লোকবলের ঘাটতির কারণে।

সম্প্রতি এক সেমিনারে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আগে তাদের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে তারা কি হতে চায়। ২০১৫ সালে বলেছিলাম অর্গানোগ্রাম আপডেট করতে। ৬ বছর পেরিয়ে গেছে তারা করতে পারেনি।

খনন কার্যক্রম বিশেষ শ্রেণির জন্য রির্জাভ করে রাখার যোগ্যতাসম্পন্ন বিএসসি ডিগ্রীধারী পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলীদের খনন কার্যক্রম পরিচালনায় বিরত রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগে দশ জন পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারসহ (নরওয়ে, বুয়েট, শাহজালাল ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, রাশিয়া থেকে ডিগ্রিধারী) অর্ধ শতাধিক বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের স্নাতক প্রকৌশলী কর্মরত থাকলেও খনন বিভাগে তাদের কাজ দেওয়া হচ্ছে না।এসব বৈষম্যের কারণে অনেকে বাপেক্স ছেড়েছেন, এখন ছাড়ার মধ্যে আছেন। একটি প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে বাপেক্স/পেট্রোবাংলায় কাজ কম করলে টাকা বেশি। কাজ কম হলে বিদেশি কোম্পানির কাজের ক্ষেত্র প্রশস্ত হয়। আর তারা কর্মকর্তাদের খুশি করার জন্য বিশেষ বরাদ্দ ছাড় করেন।

এক সময় খনন বিভাগের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারের ঘাটতি ছিল। বদলে গেছে সেই দিন এখন চুয়েট, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং (ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স মূখ্যভাবে পড়ানো হয়) স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করছে। এখন উদার হওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করছেন সংশিষ্টরা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বাপেক্স বোর্ডের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গরুর হাল দিয়ে আর কৃষি চলবে না, এখন কলের লাঙ্গল প্রয়োজন। আপনি যদি ডিপ্লোমা দিয়ে সব হবে তাহলেতো আর কিছু বলার নেই। বিদ্যাকে খাটো করে দেখলে তার পতন অবশ্যম্ভাবী। বাপেক্সকে আইওসি মানের করতে হলে উচ্চ শিক্ষার দিকে যেতে হবে। ব্যুরোক্রেট যারা আসে তারা অনেকে বুঝতে চায় না।

বাপেক্সের এমডি মোহাম্মদ আলীকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেন নি।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমানকে বার্তা২৪.কমকে বলেন, অর্গানোগ্রাম আপডেট করা হচ্ছে। এটি আমার কাছে এসেছিল, আরও যাচাই-বাছাই করার জন্য বলা হয়েছে। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ভালোর চেয়ে যাতে খারাপ না হয় সেদিকে নজর রাখা হয়েছে।

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য পদ রিজার্ভ করায় লক্ষ্য ব্যাহত হবে কি না। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাপেক্সে এখন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর সংখ্যাই বেশি। অনেক বিষয় এসেছে আরও যাচাই বাছাই হবে।

Related Posts

খরচ সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখছে বিপিডিবি!

FERB

৪২০০ কোটি টাকা আবদার পিডিবির

FERB

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণে টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন’

FERB