নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় বরখাস্ত ৪ প্রকৌশলীসহ ৮ জনের কোনো দায় নেই বলছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। তিতাসের পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ওই ৮ জনকে নির্দোষ উল্লেখ করেছে। বরখাস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের চাকরিও ফিরে পেয়েছেন। যোগ দিয়েছেন কর্মস্থলে। যদিও এই বিস্ফোরণের ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নিয়েছিল অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিল, বিস্ফোরণের ঘটনায় এই আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাফিলতি তারা পেয়েছেন।
তিতাসের সেই আটজন হলেন: তিতাসের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহামুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মো. মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, হেল্পার মো. হানিফ মিয়া ও কর্মচারী মো. ইসমাইল প্রধান।
গত ৪ সেপ্টেম্বর বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৪৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। গুরুতর দগ্ধ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, জেলা প্রশাসনের কর্মচারী, সাংবাদিকসহ ৩৪ জন মারা যান। বিস্ফোরণের ঘটনার পরপরই বরখাস্ত করা হয় তিতাস গ্যাস কোম্পানির ফতুল্লা জোনে কর্মরত ৪ প্রকৌশলীসহ ৮ জনকে। দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগে বিস্ফোরণের মামলায় ওই ৮ জনকে গ্রেফতারও করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তবে গ্রেফতারের দুই দিন পর জামিনে মুক্তি পান তারা।
মসজিদে বিস্ফোরণের পর প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, মসজিদের পাশের সড়কে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গ্যাস সরবরাহের পাইপে ছিদ্র ছিল এবং এ ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাস মসজিদের ভেতর জমা হয়েছিল। বিদ্যুতের সুইচ অন করার সময় যে স্ফুলিঙ্গ হয়, সেটি থেকেই মসজিদের অভ্যন্তরে জমা গ্যাসে আগুন লেগে যায়। এই ধারণার প্রমাণ মেলে মাটি খোঁড়াখুড়ির পর। তিতাসের লোকজন মাটি খুঁড়ে মসজিদের উত্তর পাশে গ্যাস সরবরাহের পাইপে ছয়টি লিকেজ খুঁজে পায়।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুরসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গ্যাস লিকেজের বিষয়টি তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দেওয়াতে গ্যাস লিকেজ মেরামত করা হয়নি। যদিও তিতাসের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই ঘুষের টাকা দাবি করেছিলেন তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি কেউ। অন্যদিকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষের অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিল তিতাস। তবে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি নারায়ণগঞ্জের বিশেষ পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ গত সোমবার জানান, এই ঘুষ দাবি করা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। শীঘ্রই তাকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে তিতাস সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটির পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী রানা আকবর হায়দারের নেতৃত্বে দু’টি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। দু’টি কমিটিই তাদের প্রতিবেদনে বিস্ফোরণে তিতাসের কর্মকর্তাদের কোনোরকম সম্পৃক্ততা পায়নি। কমিটিগুলো এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে তিতাস। একই সঙ্গে তাদের কোম্পানির চাকরিতে পুনর্বহাল করেছে। গত ৫ অক্টোবর থেকে তিতাসের আট কর্মকর্তা কাজে যোগ দিয়েছেন।
সিআইডি থেকে ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, তল্লার মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় পরিসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কেউই দায় এড়াতে পারেন না। দায় এড়াতে পারে না মসজিদ কমিটিও।