করোনায় বিলম্বিত হচ্ছে বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
বহুল কাঙ্ক্ষিত উত্তরের এই গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইনটির ডিপিপিতে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ছিল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও করোনার কারণে ২০২৩ সালের জুনের আগে প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে না, তা অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
প্রকল্পের আওতায় (বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর) ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ১৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। ১০০ এমএমএসসিএফডি সিজিএস (সিটি গেট স্টেশন) ৫০ (রংপুর) এবং ২০ (পীরগঞ্জ) এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন টিবিএস (টাউন বর্ডার স্টেশন) স্থাপন করা হবে।
বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর সঞ্চালন পাইপলাইনের পিডি খন্দকার আরিফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, পাইপলাইনের মালামাল ভারত, চীন এবং ইতালি থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব মালামাল দেশে এসে গেছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। বগুড়া ও নীলফামারীতে চার ধারা শেষে এখন যৌথ তদন্ত শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে রংপুরে যৌথ তদন্ত চলমান, গাইবান্ধায় ডিপিও চলছে। এরপর স্টিমেট করে অর্থ ছাড় শুরু হয়ে যাবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে কোভিড-১৯ এর কারণে মালামাল শিপমেন্টে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। কিন্তু মাস ছয়েক পিছিয়ে যাবে। মন্ত্রণালয় আশা করছে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। মাঠে হয়তো দৃশ্যমান না হলেও পাইপ আনাটাও বড় একটি কাজ। যা সফলভাবে শেষ হয়েছে।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ জন্য ৪৩৬ একর ৮৭ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হবে। মূল পাইপলাইন অংশে ৬টি নদী ও দুটি ক্যানেল রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য হচ্ছে আড়াই কিলোমিটার। এই কাজটিতে অনেক জটিল বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
জিটিসিএল (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি.) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আতিকুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনার কারণে কাজ কিছুটা ব্যাহত হলেও আমরা সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। পাইপলাইনের মালামাল চট্টগ্রামে চলে এসেছে। রিভারক্রসিং পাইপ লাইনের টেন্ডার করা হয়েছে।
রংপুরবাসীর স্বপ্নের এই সঞ্চালন পাইপ লাইনের পাশপাশি বিতরণ লাইন নির্মাণের পৃথক একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পের আওতায় ১শ কিলোমিটার থাকবে বিতরণ লাইন। এরমধ্যে রংপুর শহরে ৪৪ কিলোমিটার, পীরগঞ্জে ১০ কিলোমিটার এবং নীলফামারী ও উত্তরা ইডিজেড এলাকায় ৪৬ কিলোমিটার। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে গেছে। এই প্রকল্পও ২০২৩ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জিএম (প্লানিং) ফজলে আলম।
শিল্প কারখানার অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রকৃতি। যে অঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ যতো আগে নিশ্চিত হয়েছে, সেই অঞ্চলের শিল্প ততো এগিয়ে রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্পের প্রসার নেই বললেই চলে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করেন গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই তারা রংপুর অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনে সাহস দেখাননি। এতে বিশাল অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ পেলে রংপুর অঞ্চলেও শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। চাপ কমে আসবে রাজধানী ঢাকার উপর।
সে কারণে আশায় বুক বেঁধে আছে রংপুর অঞ্চলের বাসিন্দারা। তবে এই পাইপ লাইন হলেই সংকট কাটছে না উত্তর জনপদের। এখনই সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া অঞ্চলে তেমন গ্যাসের চাপ পাওয়া যায় না। উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাসের চাপ বাড়াতে ধুনুয়া-এলেঙ্গা পাইপলাইন (৫২ কিমি) প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এই লাইনটির জন্য বনের জমি পাওয়া নিয়ে জটিলতা ছিল। বনের জমি ছাড়পত্র পেয়েছে, এখন গাছ কাটার অনুমোদনের জন্য ঝুলে আছে। প্রায় ১৮ হাজারের মতো বনের গাছ কাটা পড়বে।
এ বিষয়ে জিটিসিএল এমডি বার্তা২৪.কমকে বলেন, বনের জমির বিষয়ে ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। এখন গাছ কাটার অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। এটি বন অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন হয়ে এলে কেবিনেটে উঠবে। আমরা আশা করছি ঝুলে থাকা এই প্রকল্পটিরও দ্রুত সমাধান হবে। পাইপলাইনটি হলে উত্তরবঙ্গে গ্যাসের চাপ এবং সরবরাহ বেড়ে যাবে।