Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

দিনাজপুর লৌহ খনি অর্থাভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে উত্তোলনের কাজ

সরকারি বরাদ্দের অভাবে দিনাজপুরের হাকিমপুর লৌহ খনি থেকে প্রকৃত উত্তেলনযোগ্য মজুদ নির্ণয় এবং মাইন ডেভেলপমেন্টের সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ করতে পারছে না ‘বাংলাদেশ ভূত্বাত্তিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)’। ফলে পিছিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান লৌহ উত্তোলনের কাজ। বিশ বছর আগে এক জরিপের মাধ্যমে জিএসবি এই এলাকায় উচ্চ মাত্রার চৌম্বকীয় আকর্ষণ খুঁজে পায়। গত বছর লৌহ খনির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। দ্রুত ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে বাণিজ্যিক মূল্য নিশ্চিত হওয়া গেলে লৌহ উত্তোলন শুরু করা যাবে।

জিএসবি প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরেছে দুইশ’ ২৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। কোভিডের বিদ্যমান বাস্তবতায় এ অর্থ জিওবি (সরকার) থেকে সংস্থান করা সহজ হবে না দাবি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জিএসবির প্রস্তাব অনুমোদন করছে না। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, জিএসবির আবিস্কৃত খনিতে তাদের কাজ না দিয়ে এটি মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানিকে লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত ২২ জুলাই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক সভায় লোহার সম্ভাব্য খনিটি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) মাধ্যমে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার পরামর্শ দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ফলে পেট্রোবাংলার ওই কোম্পানিটি পরবর্তী কাজ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জিএসবি (বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর) লৌহ ক্ষেত্রটির ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর ডেভেলপমেন্ট অব আলীহাট আয়রন ওর ডিপোজিট এট হাকিমপুর’ শীর্ষক প্রকল্প প্রনয়ণ করে। প্রকল্পের জন্য ২২৮ কোটির ৮৬ লাখ টাকার ডিপিপি করা হয়। খনির মজুদ নির্ণয়, মাইন ডেভেলপমেন্টের সম্ভাব্যতা যাচাই, উত্তোলনযোগ্য মজুদ, পানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ, মাইন ডেভেলপমেন্টের ফলে খনির আশপাশের পানির স্তরের উপর প্রভাব নির্ণয়, খনন পদ্ধতি নির্ণয়, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রণয়ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে নতুন এডিপিতে মধ্যম অগ্রাধিকার অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে এটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যার মেয়াদকাল ধরা হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২২ সাল। প্রকল্পের আওতায় ৫০টি অনুসন্ধান কূপ, ১০টি পর্যবেক্ষণ কূপ, ২টি উৎপাদন কূপ, ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে টপোগ্রাফিক সার্ভে, ইআইএ, ইএমপি, রিসেটেলমেন্ট পরিকল্পনা, এবং ৩ডি সিসমিক সার্ভে করতে চায় জিএসবি।

তবে জিএসবির এই পরিকল্পনা কোভিডের অজুহাতে আটকে দেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার মতামতে বলা হয়, ২০ আগস্ট প্রকল্পটি পর্যালোচনার জন্য অতিরিক্ত সচিবের (পরিকল্পনা) নেতৃত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রয়োজনে ২৬ আগস্ট জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জিএসবিকে প্রকল্পটির অনুকূলে অর্থ প্রাপ্তির জন্য কনসেপ্ট নোট প্রেরণ করতে বলা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রতীয়মান হয়, কোভিড ও বিদ্যমান বাস্তবতায় সরকারের পক্ষে অর্থের সংস্থান করা সহজ হবে না। জ্বালানি বিভাগের নিকট প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তাই লৌহ আকরিক ক্ষেত্রটি নিশ্চিতকরণ এবং সম্ভাব্য লিজিংয়ের বিষয়টি সভায় আলোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব ও জিএসবির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মহ. শের আলী বলেন, এ সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছে। তবে বলার মতো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, জিএসবির অধীনে হাকিমপুরে প্রাথমিক অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে চার নম্বর কূপ খননের কাজ চলছে। তিনি বলেন, স্টাডির কাজ যদি গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানিকে দেয়া হলে জিএসবি চলে আসবে, তারা কাজ করবে।

বিশ বছর আগে (২০০০ সালে) দিনাজপুরের হাকিমপুর থানার আলীহাট এলাকায় জিএসবি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে চৌম্বকীয় আকর্ষণ রেকর্ড করা হয়, যাতে চৌম্বকীয় পদার্থ বা ম্যাগনেটিক বডির উপস্থিতির আভাস মেলে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ভূপদার্থিক (ম্যাগনেটিক) জরিপ পরিচালনা করে জিএসবি। এতে একটি কূপ খনন করা হয়। কূপে স্বল্প গভীরতায় ৯২ মিটার পুরুত লৌহ আকরিকের লেয়ার আবিষ্কার করা হয়। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে আরও দু’টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়। এতে বিভিন্ন গভীরতায় ১৫৬ এবং ২০ মিটার পুরু লেয়ারের সন্ধান নিশ্চিত করা হয়।

কূপে ৪০৫ মিটারের কম গভীরতায় লোহার আকরিকের সন্ধান পাওয়া যায়। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লৌহ আকরিকের খনির তুলনায় কম। কূপ থেকে প্রাপ্ত ৮০টি নমুনা জিএসবির পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে ৬৫ শতাংশের অধিক আয়রন-অক্সাইডের উপস্থিতি বিদ্যমান। বিশ্বের অন্যান্য উন্নতমানের খনির সমতুল্য ক্ষেত্র বিশেষে অধিক। বিশ্বের উন্নতমানের খনিগুলোতে লোহার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের মতো। এসব বিবেচনায় ক্ষেত্রটিকে খুবই সম্ভাবনাময় ও উত্তোলনযোগ্য মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যত দ্রুত সম্ভব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সরকারের উচিৎ লৌহ খনিটির উত্তোলন যোগ্য মজুদ নিশ্চিত করা এবং বাণিজ্যিক মূল্য প্রমাণিত হলে লৌহ উত্তোলন শুরু করা, যাতে দেশের উন্নয়নে গতি সঞ্চার হবে।

Related Posts

আরও পাঁচ বছর ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত

FERB

মজুদ সক্ষমতা কমিয়ে এলপিজি নীতি চূড়ান্ত হওয়ার পথে

FERB

ভোলার দেওয়া সিএনজির চাহিদা শিল্পে বাড়ছে

FERB