Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

সিন্ডিকেটে ঢাকায় এলপিজির মূল্য অস্বাভাবিক

কলকাতা ও ঢাকা একই বাজারের ক্রেতা হলেও এলপি গ্যাস বিক্রয় মূল্যে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। কলকাতায় প্রতি কেজি গ্যাস ৫০ টাকার নিচে বিক্রি হলেও ঢাকায় গুণতে হচ্ছে ৭৫ টাকার মতো।

কলকাতায় ৮ সেপ্টেম্বর ১৫.৮ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে ৬৪০ রুপিতে (বাংলাদেশি টাকায় ৪৮ টাকা)। আর বাংলাদেশে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৯’শ থেকে ১ হাজার টাকা। যা কেজিতে দাঁড়ায় ৭৫ টাকার ওপরে।

অথচ দুই দেশই অধিকাংশ এলপিজি কাতার থেকে আমদানি করছে। আবার বহনের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে একই নৌপথ। দূরত্বের বিবেচনায় আনলে দেখা যাবে মংলা ও কলকাতার দূরত্ব প্রায় সমান, তবুও কলকাতার চেয়ে অনেক বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে ঢাকায়।

এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের এলপিজি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো দর নির্ধারণ করছে। দ্রুত বাড়ন্ত এই পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ক্ষমতা নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে বিলম্বে হলেও ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। হাইকোর্টের একটি নির্দেশনার কারণে খুচরা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণের কাজ শুরু করেছে।

গত মার্চে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) মতামত চেয়ে পাঠায় মন্ত্রণালয়। কোন প্রক্রিয়ায় খুচরা মূল্য নির্ধারিত হবে তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে দুই সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু করোনার কারণে বিষয়টি থমকে গেলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে বিইআরসি।

আসছে ১৮ সেপ্টেম্বর একটি বিশেষ শুনানির খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে ভোক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের মতামত নিতে চায় বিইআরসি। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দাবি করছে টন প্রতি পরিবহন খরচ ১০০ থেকে ১৪০ ডলারের মতো। তারা লাইটারেজ জাহাজ করে একসঙ্গে আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টন আমদানি করছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যদি ১৫ হতে ২০ হাজার টনের বড় ট্যাংকারে এলপিজি আনতে পারতো তাহলে পরিবহন খরচ ৭০ ডলারের মধ্যে আটকানো যেতো।

ব্যবসায়ীদের মত হচ্ছে, এতো বিপুল পরিমাণ এলপিজি একসঙ্গে এনে লাভ নেই। একদিকে না আছে তাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি, না আছে মার্কেটে চাহিদা। তাই লাইটারেজে আনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখানে ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে আনতে পারলে সহজ হতো। এতে একটি রিস্ক হচ্ছে কোনো কোম্পানি যদি যথাসময়ে এলসি খুলতে ব্যর্থ হয় তাহলে অন্যরা সংকটে পড়ে যাবেন। এ কারণে এই পথে কেউ পা মাড়াচ্ছেন না।

আরেকটি সমাধান হতে পারে, কেউ এককভাবে কিনে আনতে পারলে ভালো হতো। অন্যরা তাকে কিছু লাভ দিয়ে কিনতে পারে। তাতেও ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা লাভবান হতে পারতেন। তবে ব্যবসায়ীদের কারো কারো দূরভিসন্ধির কারণে এই পথে উন্মুক্ত হওয়ার লক্ষণ শূন্য।

অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ থেকে যে সব মাধ্যমে টাকা পাচার হয়। তার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং। কিছুদিন আগে একটি খ্যাতনামা কোম্পানির বিরুদ্ধে তেল আমদানির ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ উঠেছিল। তারা সরকারি কোম্পানির তুলনায় একই সময়ে অনেক বেশি দরে ফার্নেস অয়েল আমদানি করে। অনেকে সন্দেহ করছেন, এলপিজির ক্ষেত্রেও কোনো কোম্পানি ওভার ইনভয়েসিং করে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহৃত হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। ৯ বছরের ব্যবধানে এ চাহিদা ৭ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। ২০৪১ সালে এলপিজির চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে জ্বালানি বিভাগ।

জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব মুহা. শের আলী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গত ১০ বছরে ব্যাপক হারে এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি হারে (৯২ শতাংশ) বেড়েছে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে। আর গড় ৩৫ শতাংশ হারে বেড়েছে এলপিজি ব্যবহার। ৫৬টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি কোম্পানি উৎপাদনে রয়েছে। যে সব কোম্পানি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যদি উৎপাদনে আসে, তাহলে ২০৪১ সাল পর্যন্ত আর কোনো সংকট হবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে মুহা. শের আলী বলেন, ‘আমরা একটি প্রাইসিং ফরমুলা তৈরির চেষ্টা করছি। সেখান আমদানি মূল্য, পরিবহন খরচ, মার্কেটিং খরচ ও আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতার মার্জিন রেখে দর নির্ধারণ করে দেওয়া হতে পারে। চূড়ান্ত করার আগে সকল পক্ষের মতামত নেওয়া হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মুনাফার নামে ইচ্ছা মাফিক দাম বাড়াচ্ছে। মন্ত্রণালয় ওদেরকে লাভ করার সুযোগ দিচ্ছে। ন্যায্য দামে পণ্য পাওয়া ভোক্তার মৌলিক অধিকার, এটি আইন দ্বারা স্বীকৃত, জাতিসংঘের সনদেও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এখানে মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার কথা বিইআরসি কিন্তু মডালিটির কথা বলে জ্বালানি বিভাগ তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, ক্লিন ফুয়েল এলপিজির প্রসারে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দ্রুত এর প্রসার বাড়ছে। আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি, তারা প্রাইস নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি শিগগিরই প্রাইসিং ফরমুলা চূড়ান্ত হবে।

Related Posts

স্বাধীনতার ৫০ বছর, শুন্য থেকে মহাশুন্যে

FERB

বাতিল হতে পারে আদানির সঙ্গে অসম বিদ্যুৎ চুক্তি

FERB

বিদ্যুৎ খাতে ইচ্ছামতো লুট

FERB